ঢাকা, রবিবার ২৮ই এপ্রিল ২০২৪ , বাংলা - 

ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-10-16, 12.00 AM
ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ

ক্রমশ ভূমিকম্পপ্রবণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। মাঝে মধ্যেই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে গোটা দেশ কেঁপে উঠছে। এসব ভূমিকম্পে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত দুই মাসে বাংলাদেশ ও এর আশেপাশে মৃদু মাত্রার প্রায় ৩৪টি ভূমিকম্প হয়েছে। গত ১৫ বছরে ছোট-বড় ভূমিকম্প হয়েছে ১৪১টি, যা আশঙ্কাজনক। বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃদু মাত্রার এসব ভূমিকম্প ইঙ্গিত দেয়, সামনে বড় মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে যার ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ।

প্লেটে জমেছে দীর্ঘদিনের সঞ্চিত শক্তি, হতে পারে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প

বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাংলাদেশে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত পার্বত্য এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মণিপুর, মিজোরাম, মিয়ানমারের পার্বত্য এলাকাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়া কিশোরগঞ্জের হাওর দিয়ে মেঘনা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামানের পাশ দিয়ে দক্ষিণে যদি একটি রেখা কল্পনা করা যায়, এলাকাটি হচ্ছে দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল।এ দুটি প্লেটের মধ্যে পূর্বে অবস্থিত মিয়ানমার প্লেট, পশ্চিমে অবস্থিত ইন্ডিয়ান প্লেট। এর সংযোগস্থলের ওপরের ভাগটি অর্থাৎ সুনামগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে পূর্বে মণিপুর, মিজোরাম পর্যন্ত অঞ্চলটি লকড হয়ে আছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাওয়া ভারত ও মিয়ানমার টেকটোনিক প্লেটে গত শত বছরেও বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। তাই এই প্লেটে জমেছে দীর্ঘদিনের সঞ্চিত শক্তি। এটি যে কোনো মুহূর্তে আট থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে হাজির হওয়ার আশঙ্কা আছে।ভারত ও মিয়ানমারের প্লেট এবং বাংলাদেশের ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানবে। রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে আর তার কেন্দ্র ঢাকার চারপাশের এলাকা হলে রাজধানীর প্রায় দুই লাখ ভবন পুরোপুরি ধসে পড়বে। এমন ঝুঁকি থাকলেও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় নেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি। গ্যাস-বিদ্যুতের অপরিকল্পিত লাইন ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প হলে মৃত্যুকূপে পরিণত হতে পারে পুরো ঢাকা শহর।

দফায় দফায় ভূমিকম্পে তীব্র ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

 

২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেবার আতঙ্কেই মারা যান ছয়জন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাওয়া ভারত ও মিয়ানমার টেকটোনিক প্লেটে গত শত বছরেও বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। তাই এই প্লেটে সঞ্চিত হয়েছে দীর্ঘদিনের শক্তি। এটি যে কোনো মুহূর্তে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে হাজির হওয়ার আশঙ্কা আছে। এমন মাত্রার ভূমিকম্প হলে সেই ধাক্কা সামলাতে পারবে না ঢাকা। মৃত্যু হবে কমপক্ষে দুই থেকে তিন লাখ মানুষের।গত সেপ্টেম্বরে দেশে তিনবার ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ২। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলে।এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর সিলেট অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত। এছাড়া ৯ সেপ্টেম্বর আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসামের কাছাড় এলাকা। আগস্ট মাসে দুই দফায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে একটি অনুভূত হয় ২৯ আগস্ট। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট। এর আগে ১৪ আগস্ট আরেকবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর কেন্দ্রস্থল ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী সিলেটের কানাইঘাট এলাকায়। আগস্টের দুটি ভূমিকম্পের উৎসস্থল ডাউকি চ্যুতির মধ্যে ছিল।

গত ৫ জুন ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে বঙ্গোপসাগরে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম লাইভ মিন্ট জানায়, এদিন সকালে বঙ্গোপসাগরে ৩ দশমিক ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের কাছে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে। বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া ৮টার দিকে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে মাঝারি মাত্রার জোড়া ভূমিকম্প আঘাত হানে। দেশটির আয়াবতি ও রাখাইন রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের কক্সবাজারেও ভূকম্পন অনুভূত হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক জানান, রাখাইন রাজ্যের ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার আগারগাঁও থেকে ৩৭৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১।

যা বলছে জরিপ

বুয়েটের বিভিন্ন সময়ে করা জরিপে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ছোট-বড় ১৪১টি ভূমিকম্প হয়েছে। এছাড়া গত দুই মাসে ৩৪টি ও ৯ মাসে ১০০টি ভূমিকম্প হয়েছে দেশে। ঢাকায় ১৩ লাখ, চট্টগ্রামে তিন লাখ ও সিলেটে এক লাখ বহুতল ভবন রয়েছে। এসব ভবনের ৭৫ শতাংশ হচ্ছে ছয়তলা বা তার চেয়েও উঁচু। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এই ভবনগুলো ও এর বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।বুয়েট ও সরকারের একটি যৌথ সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাড়ে সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। যেখানে তৈরি হবে সাত কোটি টন কংক্রিটের স্তূপ।

সম্প্রতি এক গোলটেবিলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, শুধু ভলান্টিয়ার তৈরি করে এবং ভূমিকম্পের পরবর্তী উদ্ধার কাজের যন্ত্রপাতি কিনেই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যুর হার কমাতে হলে জাপানের মতো বাংলাদেশকেও ভূমিকম্প সহনীয় রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে।

আতঙ্কের মধ্যে সবাই, আতঙ্কই আরও ক্ষতির কারণ হবে

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘বেলা’র নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট অঞ্চল হচ্ছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। টাঙ্গাইলের যে ফল্টটা আছে, সেখানে যদি ৭ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পন সৃষ্টি হয় তাহলে ৭২ হাজারের মতো ভবন ধসে পড়বে এবং ৫৬ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এবার আপনি জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা হিসাব করে নিন। ঢাকায় ৮ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পন হলে দুই লাখ ঘরবাড়ি ধসে পড়বে। কী ঘটবে একবার চোখ বন্ধ করে কল্পনা করেন।’এক বছরে ছয়বার ভূমিকম্প আমাদের জন্য বিশেষ সতর্কবার্তা বলে উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের সতর্ক হতে হবে। বন্যা বা ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমাদের এক্সপার্ট আছে। কিন্তু ভূমিকম্প মোকাবিলায় আমাদের সেই সক্ষমতা নেই। আমি সরকারের কাছে জোর আহ্বান জানাচ্ছি ভূমিকম্পের ক্ষতি মোকাবিলায় এখনই প্রস্তুতি নিন। সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে। আতঙ্কের মধ্যে সবাই আছি। এ আতঙ্ক আরও ক্ষতির কারণ হবে।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী  বলেন, ‘ভূমিকম্পে সচেতনতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো ভূমিকম্প নিরোধক কিংবা মজবুত করা জরুরি। কারণ ঢাকা শহরে বেশিরভাগ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। ভূমিকম্পের সময় নিজেকে নিরাপদ রাখার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে শুকনো খাবার, পানি ও প্রাথমিক চিকিৎসাসমগ্রী সংগ্রহ করা দরকার। ভূমিকম্প নিজে মানুষকে আঘাত করে না। মানুষের তৈরি ঘর-বাড়ি বা দুর্বল স্থাপনা ও অবকাঠামো ভেঙে পড়ায় মানুষ হতাহত হয়।’

 

রেসকিউয়ের চেয়ে জরুরি অবকাঠামো

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ও ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেন্ট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে বড় ভূমিকম্পে যে ধরনের ক্ষতি হয়েছে আমাদের দেশেও একই ক্ষতি হবে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, উন্নত দেশেও বিল্ডিং কোড কিংবা রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন মানে না। তবে ঢাকা শহরের চেয়েও সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম সোর্সের কাছাকাছি থাকায় ক্ষয়ক্ষতিও বেশি হবে।’

 

‘রেসকিউ করার চেয়ে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ঠিক করাই বেশি জরুরি। এখন জাপানে যতগুলো ভবন হচ্ছে সব ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করার মতো। চিলি-পেরুর মতো স্বল্পোন্নত দেশও বিল্ডিং কোড মেনে বিল্ডিং নির্মাণ করছে।’

তিনি বলেন, ‘নতুন যেসব ভবন হয়েছে ভবনগুলো ভূমিকম্পে এখনো পতিত হয়নি। ফলে ভূমিকম্প হলে কিছুটা গুরুত্ব দেওয়া হয় আর না হলে কোনো গুরুত্ব নেই আমাদের দেশে। শতাধিক ভবন নির্মাণের সময় বিল্ডিং কোড মেনে করা হয় না। মালিকপক্ষ যেমন সচেতন নয়, দেশের ইঞ্জিনিয়াররাও এ ব্যাপারে সচেতন নন। আমরা আতঙ্কিত হচ্ছি কিন্তু সচেতন হচ্ছি না।’

 

উন্নতির সঙ্গে বাড়ছে ঝুঁকিও

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. মিজানুর রহমান  বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলা ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের জ্ঞান না থাকলে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না। তাই দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। উন্নতির সঙ্গে ঝুঁকিও বাড়ে। তাই ঝুঁকির বিষয় মাথায় রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে যে কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।’তিনি বলেন, ‘আমরা ভূমিকম্প নিয়ে বেশি কিছু করতে পারি না। ভূমিকম্প বড় কোনো দুর্যোগ নয়। আমরা বিল্ডিং কোড না মেনে নিজেরাই ভূমিকম্পের ক্ষতি সৃষ্টি করি। দক্ষিণাঞ্চলে পদ্মা সেতু ৪শ বছরের ভূমিকম্প পর্যালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে। ওই অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। এটা বিবেচনায় রেখেই পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে। মেট্রোরেলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। দেশের উন্নত অবকাঠামো নির্মাণে সব সময় সেফটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে হবে। তেমনই নিজস্ব বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত বিল্ডিং কোড মেনে করা উচিত। নতুবা নিজের তৈরি বিল্ডিং নিজের ও আত্মীয়-স্বজনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।’

 

সক্রিয় তিনটি টেকটোনিক প্লেট

 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী  বলেন, ‘বাংলাদেশের আশপাশ দিয়ে তিনটি টেকটোনিক প্লেট গেছে। এর সংযোগস্থল সীমান্তের আশপাশে। যেমন আমাদের উত্তরে হিমালয় পড়েছে ইউরেশিয়ান প্লেটে। আমাদের অবস্থান ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটে। আর আমাদের পূর্বে হচ্ছে মিয়ানমার মাইক্রো প্লেট। এ তিনটি প্লেটই আমাদের কানেক্টেড এবং সক্রিয়। প্লেটগুলোর মুভমেন্ট আছে। এগুলো প্রতি বছর পাঁচ সেন্টিমিটার বা ৫০ মিলিমিটার মুভমেন্ট করে। তার মানে, প্রতি বছর আমরা পাঁচ সেন্টিমিটার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মুভমেন্ট করছি। একইভাবে পুরো পৃথিবীও মুভ করছে।’

 

তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পর এক বছর ধরে যতগুলো গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ভবন ছিল সবগুলো কালার কোড করে দেওয়া হয়েছিল। যে ভবনের সমস্যা ছিল সেগুলো রিপেয়ার করতে বলা হয়। সেই একই প্রক্রিয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো বড় ভূমিকম্পের আগে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। মানুষ তিন-চার কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনতে পারে আর তিন-চার লাখ টাকা খরচ করে ভবন রিপেয়ার করতে পারবে না, তা হয় না। এই কাজে আমরা এগোতে পারিনি বরং সেখানেই রয়ে গেছি। এক্ষেত্রে রাজউককে উদ্যোগ নিতে হবে।’

অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ছোট-বড় ১৪১টি ভূমিকম্প হয়েছে। এছাড়া গত দুই মাসে ৩৪টি ও ৯ মাসে ১০০টি ভূমিকম্প হয়েছে দেশে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে সরকার ইক্যুইপমেন্টস কিনে দিয়েছে। শুধু ইক্যুইপমেন্টস দিয়ে হবে না। কারণ ভবন মেরামত না করলে ভবন চাপা পড়ে মানুষ মারা যাবেই। ঢাকা শহরে এছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের অপরিকল্পিত লাইন ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ।’

 

ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা

ভূমিকম্প হলে প্রাণ বাঁচাতে এবং আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার জন্য ফায়ার সার্ভিস কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। সেগুলো হলো-

 

>> ভূ-কম্পন অনুভূত হলে শান্ত থাকুন। যদি ভবনের নিচতলায় থাকেন, তাহলে দ্রুত বাইরে খোলা জায়গায় বেরিয়ে আসুন।

 

>> যদি ভবনের ওপর তলায় থাকেন, তাহলে কক্ষের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন।

 

>> ভূমিকম্পের সময় বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে নিন। অথবা টেবিল, ডেস্ক বা শক্ত কোনো আসবাবের নিচে আশ্রয় নিয়ে তা এমনভাবে ধরে থাকুন, যেন মাথার ওপর থেকে সরে না যায়। এছাড়া শক্ত দরজার চৌকাঠের নিচে ও পিলারের পাশে আশ্রয় নিতে পারেন।

 

>> উঁচু বাড়ির জানালা, বারান্দা বা ছাদ থেকে লাফ দেবেন না।

>> ভূমিকম্পের প্রথম ঝাঁকুনির পর ফের ঝাঁকুনি হতে পারে। সুতরাং, একবার বাইরে বেরিয়ে এলে নিরাপদ অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত ভবনে প্রবেশ করবেন না।

 

>> রান্নাঘরে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব বের হয়ে আসুন। সম্ভব হলে বাড়ির বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মেইন সুইচ বন্ধ করুন।

 

>> মোবাইল বা ফোন ব্যবহারের সুযোগ থাকলে উদ্ধারকারীদের আপনার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন।

 

>> দুর্ঘটনার সময় লিফট ব্যবহার করবেন না।

 

>> যদি কোনো বিধ্বস্ত ভবনে আটকা পড়েন এবং আপনার ডাক উদ্ধারকারীরা শুনতে না পায়, তাহলে বাঁশি বাজিয়ে অথবা হাতুড়ি বা শক্ত কোনো কিছু দিয়ে দেওয়ালে বা ফ্লোরে জোরে জোরে আঘাত করে উদ্ধারকারীদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করুন।

 

>> ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি ও বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে থাকুন।

>> গাড়িতে থাকলে ফুটওভার ব্রিজ, ফ্লাইওভার, গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে গাড়ি থামান। ভূ-কম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভেতরেই থাকুন।