ঢাকা, সোমবার ২৯ই এপ্রিল ২০২৪ , বাংলা - 

‘স্ত্রী, শ্যালিকা, দাদা— কেউ বাঁচল না,

ডেস্ক রিপোটার।। ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2024-03-19, 12.00 AM
‘স্ত্রী, শ্যালিকা, দাদা— কেউ বাঁচল না,

এক রাতেই আমার গোটা পরিবার শেষ হয়ে গেল! স্ত্রী, শ্যালিকা, দাদা— কেউ বাঁচল না। বাড়ি থেকে যখন বেরিয়েছিলাম, সবাইকেই দেখেছিলাম, যে যার নিজের কাজ করছে। যখন ফিরলাম, তখন টালির চালের নীচে সবাই চাপা পড়ে। গোঙানি, চিৎকার শুনলেও তিন জনের এক জনকেও বাঁচাতে পারলাম না।রবিবার সন্ধ্যায় রোজা ভাঙার পরে বাড়িতে এসেছিলাম। বৌ বলল, ফল আনতে হবে। তাই রাতে খাওয়াদাওয়ার পরে বাজারে যাব বলেছিলাম। কথা মতো সেই ফল আনতেই গার্ডেনরিচ বাজারে যাই। বেরোনোর সময়ে বৌকে দেখলাম, সেলাই মেশিনে বসে কী সব সেলাই করছে। পাশে বসে রয়েছে শ্যালিকা। আমাকে বেরোতে দেখে বৌ বলল, রাত না করে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে। ওটাই ছিল ওর আমাকে বলা শেষ কথা।

 

আমার কাছে যখন ফোনটা এসেছিল, তখন রাত ১২টা হবে। পাড়ার এক জন ফোন করে শুধু বলল, ‘সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে, বাড়ি ভেঙেছে! তাড়াতাড়ি আয়!’ আর কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ফোনটা কেটে দিল। ফোন পেয়ে আর এক মুহূর্তও দেরি করিনি। বাজার ফেলেই বেরিয়ে আসি। বাড়ি ফেরার পথে পথচলতি লোকজনের কাছে কানাঘুষো শুনছিলাম। কিন্তু ফিরে এসে যে এই দৃশ্য দেখব, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।

 

বাড়ির গলিতে যখন ঢুকছি, তত ক্ষণে পাড়ার সকলেই সেখানে জড়ো হয়ে গিয়েছে। চার দিকে চিৎকার, চেঁচামেচি। কেউ কান্নাকাটি করছে। চার দিক অন্ধকার। মোবাইলে আলো জ্বেলে সবাই দৌড়োদৌড়ি করছে। কিন্তু তখনও বুঝতে পারিনি, আমার জন্য এত বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। ভিড় ঠেলে কোনও মতে বাড়ির সামনে পৌঁছে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার বাড়িটাই আর আস্ত নেই! মাটিতে মিশে গিয়েছে। বড় বড় বিমগুলো একটি অন্যটির উপরে পড়ে। স্ত্রীর নাম করে আটকে আছে কি না, সকলের কাছে জানতে চাই। কিন্তু কারও কাছেই কোনও উত্তর ছিল না। আমি ভিতরে ঢুকতে চাইলেও সবাই আটকে দেয়। আমাকে সরিয়ে নিয়ে এসে একটা ফাঁকা জায়গায় বসিয়ে দেয়। অনেক ক্ষণ পরে একে একে আমার স্ত্রী, শ্যালিকা,দাদাকে কোনও মতে ভিতর থেকে বার করে আনা হয়। সে সময়ে ওদের এক ঝলক যা দেখেছিলাম, ওই দৃশ্য চোখে দেখা যায় না। কিছু ক্ষণ আগেই যাদের হাঁটতে-চলতে দেখে গেলাম,

তাদের প্রত্যেককেই দেখছি রক্তাক্ত, নিথর অবস্থায় বার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে!

 

নির্মীয়মাণ বাড়িটির পাশেই ছিল আমাদের দু’কামরার ছোট ঘর। টালির চালের ঘরে বৌ, দাদা, শ্যালিকা— সকলে একসঙ্গে থাকতাম। ইটের দেওয়াল ধসে পড়লেও হয়তো ওদের কেউ বেঁচে যেত। কিন্তু বড় বড় কংক্রিটের বিমগুলো টালির চালের উপরে আছড়ে পড়ায় গোটা বাড়িটাই মাটিতে মিশে গেল। কেউ বেরোতে পারল না। এক রাতেই আমার সব শেষ হয়ে গেল। অন্যের পাপের ফল ভুগতে হল আমার পরিবারকে। এই ক্ষতি পূরণ করব কী ভাবে?