ঢাকা মহানগর দক্ষিন বিএনপির যুগ্মআহবায়ক লিটন মাহমুদ বলেছেন, স্বার্থকেন্দ্রীক, সুবিধাবাদী ও উল্টোপথে চলা দল জামায়াতে ইসলামী। সম্প্রতি রাজধানীর বাংলামটরস্থ একটি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। লিটন মাহমুদ বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান বিভক্তর সময় জামায়াতে ইসলামী বিরোধীতা করেছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তযুদ্ধের সময় তারা বিরোধীতা করে পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। এছাড়া, ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ থেকে পলায়নের পর জামায়াতে ইসলামীর এক সমাবেশে দলটির আমির তার বক্তব্যে বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দিলাম। তিনি বলেন, যে দলটি গত ১৬ বছর স্বৈরাচারী মতবাদের ওপর ভর করে পুলিশের পরিসংখ্যান মতে দেশের প্রায় ৬০ হাজার লোক হত্যা করছে। দূর্বল পররাষ্ট্র নীতির কারণে স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব ছিল হুমকির মুখে। অগণতান্ত্রিক পন্থায় দেশের সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংশ করে দলীয় করণ করেছিল। গুম, খুন, আয়নাঘর বানিয়ে মানুষ হত্যা, হামলা-মামলাসহ নানা নির্যাতন-নীপিড়নের মধ্যদিয়ে দেশকে একটি কশাইখানায় পরিনত করছিল। অথচ সেই আওয়ামী লীগকে জামায়াত ক্ষমা করে দেয়। এই দলটি সব সময় উল্টোপথে চলে।
জামায়াত-বিএনপির মধ্য মতানৈক্য কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিন বিএনপির যুগ্মআহবায়ক লিটন মাহমুদ বলেন, জামায়াত ইসলামী দীর্ঘ সময় বিএনপির সঙ্গে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে মাঠে ছিল। বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের মতানৈক্যের কেন-এটা দেশের সকল মানুষের মনের প্রশ্ন। তিনি বলেন, অতীতের দিকে তাকালে জামায়াতের চারিত্রিক চিত্র আচ করতে পারবেন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকালে ১৯৮৬ সালে নির্বাচনে বিএনপি আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী অংশ নিবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। নির্বাচন পূর্ব চট্টগ্রাম লালদীঘির মাঠে আওয়ামী লীগের এক জনসভায় দলটির প্রধান শেখ হাসিনা বলছিলেন, স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে যারা নির্বাচনে যাবে, তারা জাতীয় বেঈমান। কিন্ত হলো উল্টোটা আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী ৮৬ সালের এরশাদের সেই পাতানো নির্বাচনে অংশ নিলেন। তার কারণে এরশাদের পতন আর হলো না। তবে এরশাদের পতন হলো ৯০সালে। আর যদি ৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-জামায়াত অংশ না নিতো, ঠিক তখনই এরশাদের পতন ঘটতো।
লিটন মাহমুদ বলেন, জামায়াতের কোন বর্ণ নেই। তারা অন্য বর্ণেও সহায়তায় শব্দে পরিনত হয়। কারণ এই দলটি কখনও বিএনপির সঙ্গে কখনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আবার কখনও জাতীয় পার্টির সঙ্গে থাকে। ব্যঞ্জন বর্ণের মতোই এই দলের বর্ণ।
তিনি বলেন, যদি আমরা ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের দিকে তাকাই। দেখুন ৯১ সালে বিএনপি যখন সরকার গঠন করে, সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ঐ সরকারে জামায়াতে ইসলামী দুইজন নেতাকে মন্ত্রী বানিয়েছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার। সে কারণে দেশ ও বিদেশসহ সুশীল সমাজের অনেকের মুখে নানা কথা শুনতে হয়েছিল বিএনপিকে। তিনি আরও বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ^াসী একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি। এ লক্ষ্যে সবাইকে নিয়ে দেশ ও জনকল্যানে কাজ করে চলছে। তবে, আমরা দেখেছি, পরনির্ভশীল দল জামায়াত। এই দলটি যে দিকে সুযোগ পায়, সেদিকে যায়। কাজেই এটা তাদের দলের বিষয়। তাদের দলের নিজস্ব একটি র্প্লাটফরম আছে। বিশেষ করে ঐ দলটি দেশের যে কোন সংকটকালে উল্টোদিকে টার্ন করে চলছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে লিটন মাহমুদ বলেন, দেখুন, জামায়াতকে বিশ^াস করা কঠিন কেন-৮ তে জাতীয় পার্টির সঙ্গে, ৯১ সালে বিএনপির সঙ্গে, আবার ৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলটি জোট করেছিল। তখন দেখছি ৩২ নম্বরে নিজামী, মুজাহিদ ও জিল্লুর রহমানের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছিল। যখন একটি দেশ এগিয়ে যায়, তখনই জামায়াত উল্টেদিকে বেঁকে বসে, এটা তাদের রাজনৈতিক চরিত্র বা অভ্যাস বলা চলে।
জামায়াতের দাবি ভোটে পিআর-এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিন বিএনপির যুগ্মআহবায়ক লিটন মাহমুদ বলেন, জনগনের মৌলিক অধিকার কেঁড়ে নেওয়া ফ্যাসিস্ট হাসিনা স্বৈরতন্ত্রের মধ্যদিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ভোটবিহীন সরকারে ছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গতবছর ৫ আগষ্ট দেশ থেকে পলায়নের মাধ্যমে আজ দেশবাসী স্বৈরাচার হাসিনামুক্ত। মানুষ আবারো তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পাচ্ছে ভোটের মধ্যদিয়ে। তবে, গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জামায়াত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে পিআর নামক এক অস্ত্র সামনে এনে। যেটি অতীতে কখনো এই দেশে ছিল না, এদেশের জনগনের এই পদ্ধতি সম্পর্কে নেই কোন ধারনা। এই পদ্ধতির সঙ্গে জনগন পরিচিত নয়, কারণ দেশের মানুষ পিআর কি এটাই জানেন না। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আরপিওতে নেই, সংবিধানেও নেই। তাই আমি মনে করি, জামায়াত সংবিধানের বিপরীতে গিয়ে দেশে একটা সংকট তৈরীর অপচেষ্ঠা করার পায়ঁতারা করছে। তবে এদেশের জনগন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও গ্রহনযোগ্য ভোটের দিকে তাকিয়ে আছে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, পিআর এমন এক অদ্ভুত জিনিস। যাকে ভোট দিবেন, তাকে ভোটার চিনবেনা। দেখুন, ভোটার ভোট দেবেন ঢাকা-১০ আসন মিরপুরে,আর প্রার্থী পাবে পঞ্চগরের একটি আসনে। বিচিত্র এই চিত্র জনগনের মতের বিরুদ্ধে চাপিয়ে দিতে জামায়াতসহ কিছু দল মাঠে আন্দোলন করছে। আপনি হয়ত জেনে থাকবেন, ইসলামও পিআর সমর্থন করে না।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনগন কিন্তু পিআর নিয়ে কোন কথার বলে না। বলতেও চায় না। গত ১৬ বছর যে সব তরুণরা ভোট দিতে পারে নাই। তরুণ ভোটার ও জনগনের মৈৗলিক অধিকার আদায়ে গত ১৬ বছর রাজপথে থেকে বিএনপি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। খুন, গুম, আয়নাঘরে নিয়ে নিযার্তনের মাধ্যমে হত্যা করাসহ হামলা-মামলা-জেল-জুলুম ও নানা হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে। রক্ত দিতে হয়েছে রাজপথে। ফিরে পেয়েছে দেশের প্রায় সারে তিন কোটি তরুণ ভোটারদের ভোট দেওয়ার অধিকারও। যারা বিগত হাসিনার আমলে ভোট দিতে পাওে নাই। এই তরুণদের ভোটের মধ্যদিয়ে দেশে নতুন সরকার আসবে, নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণে অবদান রাখবে বলে বিশ^াস এই নেতার।
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হওয়ার কোন শঙ্কা দেখছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে লিটন মাহমুদ আরও বলেন, আমি কোন শঙ্কা দেখছি না। আমি মনে করি, দেশে সুন্দর পরিবেশে বজায় রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইউনূস নির্বাচন প্রসঙ্গে দৃঢ়তার সঙ্গে বলছেন, নির্বাচন ‘২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সে লক্ষ্যেই সকল প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনমুখী।
জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিবে কিনা-এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবশ্যই জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিবে। তাদের দল অনেক আগে ৩০০ আসনের প্রার্থী ঠিক করে রেখেছে। এমনকি দলটির শীর্ষ ফোরাম প্রতি আসনের নির্ধারিত প্রার্থীকে ভোটের মাঠে থেকে জনগনের পাশে থাকার নির্দেশনাও দিয়েছেন। এমনকি জামায়াতের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরী করেছে ৪১ দফা কর্মসূচির অর্ন্তভূক্তির মাধ্যমে। এছাড়া, দলটির আরও ৮ইসলামী দলের সঙ্গে ভোঠের মাঠের জোট করছেন বলেও জানা গেছে-এমনটাই উল্লেখ করলেন বিএনপির এই নেতা।
দূর্গাপূজায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাইকে পূজার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে দূর্গাপূজায় হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে ঘসেটি বেগম শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে বিরোধী দলকে ধমনের অস্ত্র হিসেবে হিন্দু সম্প্রদায়ের যে কোন অনুষ্ঠানকে বেছে নিত। একইসঙ্গে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে কৌশলে উপস্থাপন করতো বিএনপি ভিন্ন ধর্মের লোকদের সব সময় অত্যাচার করে। হিন্দু, বৈদ্য ও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের যেকোন অনুষ্ঠানেই আওয়ামী লীগ অরাজকতা পরিস্থিতি তৈরী করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতো। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে নির্যাতন-নিপীড়নসহ মামলা দেওয়ার সুযোগ পেত। আপনি জানেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো সবাই উৎসব করে। কিন্তু বিগত ১৬ বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই স্বৈরাচার হাসিনা দেশকে অস্থিতিশীল পরিবেশে তৈরী করাতো। যার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিয়ে নেতাকর্মীদেরকে জেল-জুলুম ও নির্যাতন করতো ফ্যাসিস্ট হাসিনা। তিনি বলেন, তবে গত বছর থেকে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে পূজা অনুষ্ঠানস্থলে রয়েছে। লিটন মাহমুদ আরও বলেন, আমি মনে করি, এবছর সুন্দর ও নির্বিঘ্নে পূজার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে হিন্দু সম্প্রদায়।