ঢাকা, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫,
সময়: ০২:৫২:২৭ AM

বেহাল দশা কমিটিছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির

ষ্টাফ রিপোটার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম
24-09-2025 04:09:04 PM
বেহাল দশা কমিটিছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির

দীর্ঘ ১৫ বছর হয়ে গেছে তবুও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কোনো কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়নি। যা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। প্রবাসী নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কমিটি না থাকায় তাদের কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে পড়েছে, পাশাপাশি একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে। বিশেষ করে দেড় দশক ধরে ত্যাগ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে যারা দলের জন্য কাজ করেছেন, তাদের মূল্যায়ন না হওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ।যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির বর্তমান পরিস্থিতি এমন এক সময়ে আলোচনায় এসেছে, যখন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিউইয়র্কে হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বিএনপি মহাসচিব যখন বিমানবন্দরে হেনস্তা হলেন তখন পাশে ছিলেন না কোনো নেতাকর্মী। যদিও বলা হয়েছে নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরের যে গেটে অপেক্ষায় ছিলেন মির্জা ফখরুলরা অন্য গেট দিয়ে বের হতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন।তবে দলের নেতাকর্মীদের সমন্বয়হীনতার কারণে এমন পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি মহাসচিবকে পড়তে হয়েছে তা স্পষ্ট হয়েছে। খোদ দলের নেতাকর্মীরাও এ নিয়ে কথা বলছেন।কারণ একইসঙ্গে বিমান থেকে বের হয়ে নেতাকর্মী বেষ্টিত হয়ে নিরাপদে বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন জামায়াত নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। বরং মির্জা ফখরুলকে নিরাপদে বিমানবন্দর থেকে বের হতে পাশে ছিলেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবারের নিউ ইয়র্কের ঘটনার কথা তুলে ধরে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান ফেসবুকে দলের সীমাহীন সমন্বয়হীনতা ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কথা তুলে ধরেছেন।ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, বিএনপি মহাসচিবসহ আগত প্রতিনিধিদের রিসিভ করার জন্য প্রায় পাঁচ শতাধিক বিএনপির নেতাকর্মী বিমানবন্দরের টার্মিনাল ৮ এ অপেক্ষা করছিলেন। কারণ এখন দিয়েই তাদের বের হওয়ার কথা জানতেন আগত নেতাকর্মীরা। কিন্তু প্রতিনিধি দলটি বের হয় টার্মিনাল ৪ দিয়ে। এই গোপন সংবাদটি দূতাবাসের কেউ আওয়ামী লীগের কাউকে জানিয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে ফ্যাসিবাদের দোসরদের কয়েকজন টার্মিনাল ৪ এ ঢুকে আগে থেকেই ওত পেতে বসেছিল। তিনি আরও লিখেছেন, এই সংবাদ পাওয়ার পর বিএনপিরও ৪০/৫০ জন নেতাকর্মী টার্মিনাল ৪ এ যায়, তখন কেউ একজন তাদের এখানে ভীড় করতে নিষেধ করে এবং বলে যে প্রতিনিধি দল ড. ইউনূসের সঙ্গে ভিআইপি গেট দিয়ে বের হয়ে গেছে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো ইউনূস ও সরকারি কর্তাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট থাকায় তারা ভিআইপি গেট দিয়ে পার হয়ে যেতে পেরেছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিনিধি দলের সাধারণ পাসপোর্ট থাকায় ৪ নং টার্মিনাল দিয়েই বের হতে হয়েছে। এই তথ্য ফ্যাসিবাদীদের কাছে সময়মতো সরবরাহ করার ফলে তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পরেছে। এদিকে এমন পরিস্থিতিতে জোরালো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি দেওয়ার বিষয়টি। অবশ্য নেতাকর্মী দলের এমন বেহাল দশার জন্য বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকনকে দুষছেন। যিনি ২০১৯ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কমিটি গঠনের দায়িত্বে রয়েছেন। তাদের মতে, খোকন নিজের অনুসারীদের নিয়ে ক্ষুদ্র কমিটি গঠন করেছেন, যেখানে অনেক পুরোনো নেতাকর্মীকে স্থান দেওয়া হয়নি। খোকনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট ও মহানগরে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দলীয় কমিটি বানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা দেখা গেছে। নেতাকর্মীরা দাবি করছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে আছেন এমন নেতাদের ভূমিকা উপেক্ষা করে শুধুমাত্র এক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া দলের ঐক্য ও কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।আনোয়ার হোসেন খোকন যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলছেন, আমার কোনো নিজস্ব বলয় নেই, সবাই বিএনপির লোক। যুক্তরাষ্ট্র একটি বড় দেশ, এখানে এক স্টেট থেকে অন্য স্টেটে যেতে অনেক সময় লাগে। তাই আমি এখন পর্যন্ত ১৮টি স্টেট কমিটি দিয়েছি। কোথাও অনৈতিক কিছু হয়নি।ফ্লোরিডাতে দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় এক নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির পুরোনো নেতারা, যারা প্রবাসে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন, তারা আজও কমিটি না পাওয়ায় বিরক্ত। দেশের বাইরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা শুধু আন্দোলনেই নয়, অর্থনৈতিক সহায়তা ও কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডেও বিএনপির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু ১৫ বছরেও কমিটি না হওয়ায় তাদের ত্যাগের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী এই নেতা বলেন, 'আমরা আশা করবো দল সব কিছু জেনে বুঝে ত্যাগীদের দিয়ে কমিটি করে দিবে। কারণ কেউ তো টাকা পয়সা চায় না দল থেকে। একটু সম্মান চায়।' এক চিঠিতে বন্ধ করা হয় দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি কমিটি নিয়ে আলোচনা -সমালোচনার মধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে আট মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ব্যানারে কোনো কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, কেউ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ব্যানারে কর্মসূচি পালন করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়। গত ১৭ জানুয়ারি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমন সিদ্ধান্তে অবাক হয়ে যান অনেকে।নেতাকর্মীদের প্রশ্ন- দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা গুরুতর কোনো অভিযোগ না আসার পরও দল থেকে কেন কার্যক্রম পালনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো। অবশ্য এমন নির্দেশনার মধ্যেও একেক বলয়ের লোকজন দলের কর্মসূচি ভিন্ন-ভিন্নভাবে পালন করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির অতীত-বর্তমান অনেক নেতাকর্মী জেল-জুলুমের আতঙ্কে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি জমালেও দলের সঙ্গেই আছেন। স্থানীয়ভাবে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি দেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। নেতাকর্মীদের বিপদে, আন্দোলনে আর্থিক সহযোগিতা করেন দেদারছে। কিন্তু বর্তমানে পদ পদবীহীন হয়ে ঘুরতে হচ্ছে দেশটিতে রাজনীতিতে সক্রিয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম কমিটি গঠন করেছিল সেখানকার বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে ১৯৯৬ সালে প্রথম কমিটি অনুমোদন দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সর্বশেষ ২০০৫ ও ২০১১ সালে আব্দুল লতিফ (সম্রাট) ও জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটি দেওয়া হয়, যা ২০১১ সালে ভেঙে দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের পর তারেক রহমান কয়েকবার কমিটি গঠনের ব্যাপারে আলোচনা ও লন্ডনে বৈঠক করলেও তা আর হয়নি। পরবর্তীতে আনোয়ার হোসেন খোকনকে কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু তাতে কোনো গতি আসেনি।যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি সংক্রান্ত বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বড় দেশ, এখানে বিভিন্ন স্টেট কমিটির মাধ্যমে বিএনপি কাজ করছে। দলের মধ্যে একটি সেন্ট্রাল কমিটি থাকবে না, এরকম কোনো পরিকল্পনা নেই। বিদেশে থাকলেও দলের নেতাকর্মীরা আন্দোলন এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এসব বিষয় গুরুত্ব সহকারে দেখছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে ঘটনা ঘটেছে সেখানে দলের সমন্বয়হীনতার পাশাপাশি সরকারের ব্যর্থতাও আছে। তবে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগে আন্দোলনের পাশাপাশি দেশের আন্দোলন সচল রাখতে আর্থিক সহযোগিতা করা কর্মীদের একটা আইডেন্টিটি অবশ্যই হওয়া উচিত।