
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) হঠাৎ হঠাৎ বদলি, পদায়ন ও বরখাস্তের কারণে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। যে কোনো মুহূর্তে বদলি বা পদচ্যুত হওয়ার শঙ্কায় তারা উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। ঘন ঘন দায়িত্ব পরিবর্তন ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রশাসনিক কার্যক্রমেও প্রভাব ফেলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরেই এ অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ সময়ে দেড় হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি, পদায়ন ও বরখাস্ত হয়েছেন। সর্বশেষ বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) কাস্টমসের ৪৮৫ জন রাজস্ব কর্মকর্তাকে বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এনবিআর। এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর ৫৫৫ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, ১৫ সেপ্টেম্বর ১৮২ জন এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে আরও কয়েকশ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন পর্যায়ে বদলি ও পদায়ন করা হয়।
অনেক কর্মকর্তা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা প্রতিদিন দুশ্চিন্তার মধ্যে কাজ করি। হঠাৎ করেই বদলি বা বরখাস্তের আশঙ্কা থেকে মুক্ত নই। এতে মনোযোগে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।”
সূত্র মতে, চলতি বছরের মে-জুনে অনুষ্ঠিত এনবিআর সংস্কার আন্দোলনের পর থেকেই বদলি ও বরখাস্তের হার বেড়েছে। আন্দোলনে সক্রিয় ৩৪ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। ১৭ জনকে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় জড়ানো হয়েছে এবং অনেকে শাস্তি হিসেবে অগুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাঠানো হয়েছে।
এনবিআর কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, এসব রদবদল নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ, কোনো পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত নয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রও দাবি করেছে, বদলি-বরখাস্তের সব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক কারণে নয়; শৃঙ্খলা রক্ষা ও কাজের গতি ত্বরান্বিত করার জন্যও এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
তবে কর্মকর্তারা মনে করছেন, স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ছাড়া হঠাৎ পদায়ন বা বরখাস্ত কর্মপরিবেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে এবং মনোবল ভেঙে দিচ্ছে। এর ফলে রাজস্ব সংগ্রহেও ঘাটতির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১২ মে সরকার এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে দুটি নতুন সংস্থা—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ—গঠন করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণে নেওয়া এ পদক্ষেপ ঘিরেই শুরু হয় দুই মাসব্যাপী আন্দোলন, যা সারাদেশের রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, “আন্দোলন শেষ হলেও কর্মকর্তাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা কাটেনি। তারা আতঙ্কে থাকলে নিয়মিত কাজ ব্যাহত হওয়াই স্বাভাবিক।”
অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “সব সিদ্ধান্ত নিয়ম মেনে হলে ভালো। নিয়ম ভঙ্গ হলে কাজের পরিবেশ নষ্ট হয়। কর্মকর্তাদের মানসিক চাপে না ফেলে দক্ষভাবে কাজে লাগানো জরুরি। অন্যথায় রাজস্ব আহরণে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।”