ঢাকা, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫,
সময়: ০৪:৪৬:০৯ AM

পশ্চিমবঙ্গে সরকারি হাসপাতালে ফের ধর্ষণের অভিযোগ

ষ্টাফ রিপোটার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম
16-09-2025 08:33:27 PM
পশ্চিমবঙ্গে সরকারি হাসপাতালে ফের ধর্ষণের অভিযোগ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালে আবারো ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এবার পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ তুলেছেন খোদ ওই হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক নারী নিরাপত্তাকর্মী। এই ঘটনায় ইতোমধ্যেই একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গেছে, রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার দায়িত্ব বেসরকারি এজেন্সিকে দেওয়া হয়েছে। পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেও একটি বেসরকারি সংস্থা নিরাপত্তার দিকটি দেখাশোনা করে। তাদের মাধ্যমে নিরাপত্তা কর্মীদের নিয়োগ করা হয়। সূত্রের খবর, এই হাসপাতালে পাঁচ বছর ধরে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করছেন এক নারী। তার অভিযোগ, ওই নিরাপত্তা সংস্থার ফেসিলিটি ম্যানেজার জাহির আব্বাস খান বিভিন্ন সময় তাকে হাসপাতালে ভেতরেই ধর্ষণ করেছেন এবং এসব কথা কাউকে বলা হলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হতো। 

শুধু তাই নয়, ওই নারী আরও দাবি করেন- অন্য নারী নিরাপত্তা কর্মীদেরও একইভাবে যৌন নির্যাতন করেছেন জাহির। তবে দিনের পর দিন এমন ঘটনা ঘটলেও অভিযোগ করতে সাহস পাননি নির্যাতিতা। 

সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘রোববার দুপুরে যখন আমি ডিউটি করছিলাম, সেই সময়ে জাহির আমাকে ডাকে। জোর করে বহির্বিভাগের একটি ঘরে নিয়ে যায় ও ধর্ষণ করে। মাঝে মাঝে এ ধরনের খারাপ আচরণ আমার সঙ্গে করেছে। ভয়ে আমরা মুখ খুলতে পারিনি। এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই ভয় কাটিয়ে অভিযোগ করেছি।’সোমবার পাঁশকুড়া থানায় জাহিরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই নারী। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ফেসিলিটি ম্যানেজার জাহিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

হাসপাতালের এক কর্মী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘জাহির নিরাপত্তারক্ষীদের কাজের তদারকি করেন, সেই সূত্রে সকলের ওপ প্রভাব খাটান। সামান্য সাত-আট হাজার টাকার মাসিক বেতনে আমরা কাজ করি। তাই অভিযোগ জানাতে চিন্তা হতো, চাকরিটা না চলে যায়। জাহিরের প্রস্তাবে কেউ রাজি না হলে পরিবারের সদস্যদের খুনের হুমকিও দেওয়া হতো।’

এদিকে মাসের পর মাস এই ঘটনা ঘটলেও স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্তারা বিষয়টি জানতেন না বলে দাবি করেছেন।

পাঁশকুড়া ব্লকের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কৌশিক ঢল বলেন, ‘হাসপাতালে নিরাপত্তা যিনি দেখবেন, তিনি যদি ধর্ষণের শিকার হন, সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আউটডোর বন্ধ থাকায় রোববার ফাঁকা ছিল হাসপাতাল। সেই সুযোগে অভিযুক্ত এ কাজ করছে। আমার কাছে এই অভিযোগ আগে কেউ জানাননি।’

তমলুকের মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিভাস রায় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আগে এই সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। পুলিশকে বলা হয়েছে, তদন্ত ঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে। যে সংস্থার হয়ে অভিযুক্ত কাজ করেন, তাদের শোকজ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।’

তমলুকের মহকুমা পুলিশ কর্মকর্তা আফজাল আবরার বলেন, হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে এই ঘটনায় রাজনীতির রং লেগেছে। রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের চাপে দীর্ঘদিন ধরে এই ঘটনা সামনে আসেনি বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি। তারা গ্রেফতার জাহিরকে শাসক দলের নেতা হিসেবে দাবি করেছে। 

অন্যদিকে তৃণমূলের বক্তব্য, জাহির দলের কোনো পদে নেই। এই ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রশ্নও নেই। তাই অভিযোগ পেয়েই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।

এরআগে গত বছরের ৯ আগস্ট কলকাতার শ্যামবাজার এলাকায় অবস্থিত আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের বিশ্রামকক্ষ থেকে এক নারী চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার হয়। পরে ময়নাতদন্তে জানা যায়, ওই চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মীর হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই নারী চিকিৎসক। এ নিয়ে আন্দোলন এখনো চলেছে। এ বার খোদ হাসপাতালে নিরাপত্তা কর্মী যৌন নিগ্রহের মুখে পড়েছেন, যার অন্যদের সুরক্ষিত রাখার কথা।